আলিফ হোসেন, তানোরঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) ভিআইপি এই সংসদীয় আসনে ভোটের মাঠে প্রার্থীদের গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় সরগরম। এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর (কাঁচি) মধ্যে পার্থক্য নিয়ে নেতা ও কর্মীসমর্থকদের মাঝে চলছে চুল-চেরা বিশ্লেষণ। যেখানে বিলাস ও প্রচার বিমূখ গণমানুষের নেতা আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধূরী রাজনৈতিক দূরদর্শীতা এবং নিজস্ব স্বকীয়তায় তৃণমূলের রাজনীতিতে জনপ্রিয়তায় গোলাম রাব্বানীর থেকে যোজন যোজন দুরুত্বে এগিয়ে রয়েছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে ওমর ফারুক চৌধূরী গোলাম রাব্বানীর অবস্থান সাধারণ মানুষের মধ্যে ফুটে উঠেছে। নির্বাচনের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ এই দু’রাজনৈতিক নেতার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, ওমর ফারুক চৌধুরী জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান হেনার ভাগ্নে। তার বাবা শহীদ আজিজুল হক চৌধুরী ও চাচা মুকবুল হক চৌধুরী দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। গোলাম রাব্বানীর মতো নেতারা রাজনীতি করে যেখানে পৌঁছাতে চাই, সেখান থেকে ফারুক চৌধুরী রাজনীতির শুরু। রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবার অনেক আগেই তিনি অর্জন করেন সিআইপি মর্যাদা এবং হয়েছেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও সর্বোচ্চ স্বচ্ছ আয়করদাতা, বৃৃৃৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদানের জন্য রাস্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃৃৃক স্বর্ণপদক অর্জন ও পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা। দেশের সম-সাময়িক রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনিই একমাত্র নেতা যাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সকল প্রটৌকল ভেঙ্গে একক ক্ষমতা বলে দলে যোগদান করিয়েছেন এবং পরবর্তীতে একটানা ৬ বার দলীয মনোনয়ন দিয়েছেন, করেছেন প্রতিমন্ত্রী, জেলার সভাপতি ও সম্পাদক তিনি একটানা তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।একজন নেতার প্রতি কতটা আস্থা, বিশ্বাস ও ভরসা থাকলেই কেবল একটি রাজনৈতিক দলের সভাপতি এবং বিশ্বমানের নেতা কাউকে এভাবে সম্মানিত করেন সেটার গভীরতা অনুধাবন করতে হবে। এছাড়াও এমপি ফারুকের অর্থলিপসা না থাকায় প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যর তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি তিনি সরকারি কলেজ নির্মাণের জন্য দান করেছেন এবং এখানো এমপির সম্মানি ভাতার একটি টাকাও তিনি গ্রহণ না করে তা এলাকার হতদরিদ্র নেতাকর্মীদের মধ্যে দিয়ে আসছেন। আবার চাকরি মেলা করে এলাকার হাজার হাজার বেকার জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে তানোরের আমশোমথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনা পয়সায় নৈশপ্রহরী নিয়োগ দিয়েছেন
হতদরিদ্র পরিবারের দুইজনকে। তানোরের কলমা ইউপির ঘৃতকাঞ্চন গ্রামের মুনসুর আলীর পুত্র হাফিজুর রহমান পুলিশের সার্জেন্ট, পিপঁড়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের পুত্র আব্দুল মালেক পুলিশের এএসআই,চৌরখৈর গ্রামের মৃত জানবক্সের পুত্র নাইমুর রহমান পুলিশ কন্সটেবল, এনায়েতপুর গ্রামের শ্যামল সিং এর কস্যা শ্যামলী সিং পুলিশ কনেস্টবল, চৌরখৈর গ্রামের বয়ান উদ্দিনের পুত্র আইয়ুব আলী স্বাস্থ্য সহকারী, শংকরপুর গ্রামের তাজেমুদ্দিনের কন্যা তানজিলা পুলিশ কন্সটেবল,জালাল উদ্দিন স্বাস্থ্য সহকারী, বিল-ী গ্রামের পুর্ণিমা মাঝি পুলিশ কন্সটেবল, সাজ্জাদ আলীর পুত্র সোহেল রানা পুলিশ কন্সটেবল,এনায়েতপৃর গ্রামের আব্দুর রহমানের পুত্র তরিকুল ইসলাম পুলিশের এএসপি, মালবান্ধা গ্রামের আজিজ মন্ডলের কন্যা রিক্তা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, দেলোয়ার হোসেন জেলা জজ, ধানতৈড় গ্রামের আব্দুল্লাহ বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক,কামেল মারডি মুন্ডুমালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, চন্দনকৌঠা গ্রামের মেকরাইলের পুত্র সেলিম পুলিশের এসআই,গোল্লাপাড়া গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের পুত্র বুরজাহান পুলিশের এসআই, তানোর শীবতলা গ্রামের নিশিত দাসের পুত্র সম্রাট কুমার দাসের সার কারখানায় চাকরি হয়েছে ও আমশো তাতিয়ারপাড়া গ্রামের আলফাজের ভাই মাসুদ রানা পুলিশের সার্জেন্ট প্রমূখ। অন্যদিকে তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি মহাবিদ্যালয় সরকারিকরণ, দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আধুনিক করণ, দুটি মডেল মসজিদ, দুটি উপজেলা কমপ্লেক্স, দুটি উপজেলা হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নতিকরণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধুনিক দৃষ্টিনন্দন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, একাধিক কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান, গোদাগাড়ীতে নৌবন্দর কমিউনিটি ক্লিনিক চালু ও ভবন নির্মাণ ইত্যাদি দৃশ্যমান উন্নয়ন ফারুক চৌধুরীর হাতে সাধিত হয়েছে।এছাড়াও এমপি ফারুক চৌধুরী তার দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের রাজনৈতিক জীবনে তানোর-গোদাগাড়ী থেকে প্রতিদিন তিনি যদি ৫ জন করে মানুষের উপকার করে থাকেন, তাহলে ৩৬৫ দিনে ১৮২৫ জন এবং ২০ বছরে ৩৬ হাজার ৫০০ জন মানুষের সরাসরি উপকার করেছেন। তাহলে উপকারভোগী এই মানুষগুলো তো এখানো এমপির পক্ষে মাঠে আছে। এছাড়াও এই আসনের দুটি উপজেলা, ৪টি পৌরসভা এবং ১৬টি ইউনিয়নের (ইউপি) আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি ওয়ার্ডের সাংগঠনিক নেতাকর্মী ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে রয়েছেন।
অন্যদিকে এমপি ফারুক চৌধুরীর বদৌলতে গোলাম রাব্বানী দুইবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছিলেন। স্থানীয়রা জানান, সভাপতি হয়েও তিনি জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। যা দল, নেতা ও নেতৃত্বের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এদিকে তিনি দুবার পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও দুইবার মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্ত্ত ১০ বছরে ইউপির উল্লেখ করার মতো দৃশ্যমান তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। তবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ার-এর টাকায় ইলামদহী হাটের যে উন্নয়ন কাজ করা হয় তা নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা রয়েছে। একইভাবে মুন্ডুমালা পৌরসভার উন্নয়নে ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়াও পৌরসভায় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে নানা গুঞ্জন রয়েছে। আছে বিচার-সালিশ নিয়ে মুখরোচক নানা আলোচনা।
এছাড়াও বিগত ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট মঙ্গলবার মুন্ডুমালা পৌরবাসির পক্ষে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফিরোজ কবির ও ৭ নম্বর কাউন্সিলর নাহিদ হাসান স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ করা হয়। পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী, সচিব আবুল হোসেন ও হিসাব রক্ষক আব্দুল আওয়ালের বিরুদ্ধে ৪টি প্রকল্পে দূর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের সুনিদ্রিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করে এসব দূর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে চেয়ারম্যান দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়াও অবগতির জন্য অভিযোগের অনুলিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় মন্ত্রী স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সাংসদ, সচিব স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর প্রেরণ করেছিলেন।
কাউন্সিলরগণের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছিল, মেয়র গোলাম রাব্বানী, সচিব আবুল হোসেন ও হিসাব রক্ষক আব্দুল আওয়াল সিন্ডিকেট করে নামে-বেনামে ভূয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে ও নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছে। এছাড়াও মেয়র প্রায় ১৮ মাস পৌরসভায় কোনো সভা আহবান করেননি। অভিযোগে আরো বলা হয়েছিল, মেয়র গোলাম রাব্বানী সচিব ও হিসাব রক্ষকের যোগসাজশে এডিবি তহবিলের টাকা রাজস্বখাতে স্থানান্তর করে ভূয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা লোপাট করেছে। আবার পৌরসভার অর্জিত রাজস্ব খাতের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ভূয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও মুন্ডুমালা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড টেটনাপাড়া মহল্লায় দীঘিপুকুরে একই প্রটেকশান ওয়াল দুই বার দরপত্র দেখিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা আতœসাৎ করা হয়েছে।
এছাড়াও জলবায়ু প্রকল্পের কিছু কাজ নিম্নমাণের এবং কিছু কাজ না করেই ভূয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি টাকা আতœসাৎ করা হয়েছে। এসব ছাড়াও গোপণে আরো অনেক দূর্নীতি করেছেন তদন্তে যা বেরিয়ে আসবে বলে অভিযোগে বলা হয়েছিল।
অন্যদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত, মুন্ডুমালা পৌরসভা ও পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) মতো ক্ষুদ্র দুটি এলাকায় যিনি ২০ বছরে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি তানোর-গোদাগাড়ী আয়তনের দিক দিয়ে যেটা দেশের অষ্টম বড় সংসদীয় এলাকা, সেখানে কিভাবে উন্নয়ন করবেন, সেটা অবশ্যই বিবেচনা করে ভোটারগণ ভোট প্রয়োগ করবেন। সচেতন মহলের অভিমত, সরকার দলীয় প্রার্থীর বিজয় ব্যতিত এলাকার উন্নয়ন হয় না। তাই উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার দলীয় প্রার্থীর বিজয় ব্যতিত বিকল্প ভাবছেন না। ওদিকে সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনা রয়েছে, যে ব্যক্তি একাধিকবার দলীয় মনোনয়নে উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারে না, সে কিভাবে এমপি নির্বাচনে বিজয়ী হবেন ? এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম রাব্বানী (স্বতন্ত্র প্রার্থী) (কাঁচি) সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভোটের মাঠে তার জনপ্রিয়তায় ভিত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যাচার করছে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিজয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।